শনিবার খুলবে আশুলিয়ার বন্ধ পোশাক কারখানা

রাজধানীর ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকা কারখানাগুলো শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) থেকে খুলতে শুরু করবে বলে জানিয়েছে পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এছাড়া চলমান নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা থেকে গার্মেন্টস শিল্পকে রক্ষায় আশুলিয়ায় শ্রমিক-জনতার সমাবেশ অনুষ্ঠিত...

শনিবার খুলবে আশুলিয়ার বন্ধ পোশাক কারখানা

শনিবার খুলবে আশুলিয়ার বন্ধ পোশাক কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক :: own-reporter

রাজধানীর ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকা কারখানাগুলো শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) থেকে খুলতে শুরু করবে বলে জানিয়েছে পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

এছাড়া চলমান নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা থেকে গার্মেন্টস শিল্পকে রক্ষায় আশুলিয়ায় শ্রমিক-জনতার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকেও আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকদের আগামীকাল (শনিবার) থেকে কাজে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের কারখানায় কারখানার মালিক, বিজিএমইএ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব প্রমুখ।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, শনিবার থেকে আশুলিয়ার বন্ধ কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গাজীপুরের কারখানাগুলোও খুলবে। হা-মীম, শারমীনসহ যেসব বড় গ্রুপের কারখানাসহ মালিক কারখানা খোলার বিষয়ে ইতিবাচক মনে করবেন, তারা খুলবেন।  

আবদুল্লাহ হিল রাকিব আরও বলেন, সেনাবাহিনীর তরফ থেকে আরও নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া যৌথবাহিনীর অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। বিশৃঙ্খলাকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে, বিকালে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার বিনোদর পার্ক ফ্যান্টাসি কিংডম মাঠে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, গত এক বছরে নানা সমস্যার কারণে প্রায় ২৭০ টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এরপরও বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকে আছে অন্যান্য কারখানায় উৎপাদন শিথিল ছিলো বলে। তাই আপনারা কারখানা চালু রাখেন। কারখানা চালু থাকলে আপনি বাঁচবেন, আমরা বাঁচবো, দেশ বাঁচবে। শ্রমিকদের দায়িত্ব তাদের শিল্প রক্ষা করা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের এই ক্লান্তিকালে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে যারা গার্মেন্টস শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্থ করে দেশকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

খন্দকার রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, আজকে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে না দাঁড়াই তাহলে পোশাক শিল্পটা ধ্বংস হয়ে যাবে। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশ থেকে ১০ থেকে ১৫ পার্সেন্ট অর্ডার শিফট করেছে অন্যান্য দেশে। এই সাময়িক দূর্যোগের সময় ঐক্যবদ্ধভাবে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। আমরা অতীতেও অনেক সমস্যা অতিক্রম করে বাংলাদেশকে আজকে এখানে এনেছি। এখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সময়।

সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ বলেন, ইতিমধ্যে আমরা শ্রমিকদের বেশীরভাগ দাবি মেনে নিয়েছি। শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী হাজিরা বোনার ২২৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে, টিফিন বিল ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে, কোন শ্রমিককে যেন ব্লাকলিস্ট করা না হয় এ জন্য কালো আইন বাতিল করা হয়েছে, যোগ্যতার ভিত্তিতে নারী ও পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হবে। এছাড়া কারখানায় যদি কোন কর্মকর্তা শ্রমিকদের সাথে খারাপ আচরণ করে থাকে তাহলে অভিযোগ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, শ্রমিকরা কখনও কারখানায় ভাঙচুর করে না। কারণ এখান থেকেই তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা বাইরে থেকে এসে কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, র‌্যাবের গাড়ি ভাংচুর করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া কোন উপায় নাই। শনিবার থেকে শিল্পাঞ্চলের ভাঙচুর ও নৈরাজ্য ঠেকাতে এবং দুষ্টের দমন করার জন্য সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আগামীকাল থেকে আপনারা অন্যরকম সেনাবাহিনী দেখতে পাবেন। গতরাত থেকেই অভিযান শুরু হয়েছে। আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দুষ্টু লোকের জন্য ভয়ঙ্কর।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে সরকার একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে দিয়েছেন। এখানে শ্রমিক নেতা আছে, ব্যারিস্টার আছে, মালিকের প্রতিনিধি, বিজিএমইএর প্রতিনিধি আছে। শনিবার সাবাই মিলে শ্রমিক নেতা এবং মালিকদের সাথে বসবে। সেখানে শ্রমিকদের উত্থাপিত দাবির বিষয়ে সরকারকে অবহিত করা হবে।

প্রসঙ্গত, টানা দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে তৈরি পোশাক খাতের অস্থিরতা চলছে। সে জেরে বৃহস্পতিবারও সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুরের ২৫৭ তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। এর মধ্যে ৯৪ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল মালিকপক্ষ। শুধু আশুলিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিল ৮৬টি কারখানা। তবে বিজিএমইএ দাবি করেছে, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের ১১৫ পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। সার্বিকভাবে গতকাল পর্যন্ত ৭৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ কারখানা (বিজিএমইএর সদস্য) আগস্ট মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে। ৫৪৯ কারখানার মজুরি বাকি রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ

© Bangladesh Journal

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow