অসন্তোষ হলে রোববার থেকেই পোশাক কারখানা বন্ধ: বিজিএমইএ
পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে হামলা-ভাঙচুর অব্যাহত থাকলে ওই কারখানা বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সংগঠনটি জানায়, রোববার ঢাকার আশুলিয়ায় যে কারখানায় শ্রম অসন্তোষ দেখা দেবে, সেই কারখানাই শ্রম...
অসন্তোষ হলে রোববার থেকেই পোশাক কারখানা বন্ধ: বিজিএমইএ
বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক :: own-reporterপোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে হামলা-ভাঙচুর অব্যাহত থাকলে ওই কারখানা বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সংগঠনটি জানায়, রোববার ঢাকার আশুলিয়ায় যে কারখানায় শ্রম অসন্তোষ দেখা দেবে, সেই কারখানাই শ্রম আইন অনুযায়ী বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পোশাক শিল্প শ্রমিকদের খাতে দুই সপ্তাহ ধরে চলা অসন্তোষে সবচেয়ে বেশি উত্তাল আশুলিয়া এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) রাজধানীর উত্তরা কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে কারখানা মালিক ও সংগঠনের নেতাদের মতবিনিময় সভায় এমন কথা বলেন বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
বিজিএমইএর সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)।
‘আশুলিয়াস্থ তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর চলমান সংকট ও উত্তরণের পথ নিয়ে মতবিনিময় সভা’ শীর্ষক এই আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, আদিলুর রহমান খান ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অতিথি হয়ে বক্তব্য শুনেন। দুপুরে শুরু হওয়া এই মত বিনিময় চলে সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময়।
বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার কারখানা চালু রাখা হবে। তখন যদি কোনো কারখানায় হামলা, ভাঙচুর হয়… শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিলে আশুলিয়ার কারখানা মালিকেরা কারখানা বন্ধ করে দেবেন।
তার এমন ঘোষণায় সমর্থন দিয়ে পোশাক নিট পোশাক কারখানা মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিকেএমইএ সংগঠন এই ঘোষণাকে সমর্থন দিলাম। ভাঙচুর হলে আশুলিয়ার কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে।
তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, এভাবে তো হবে না। শ্রমিক, মালিক ও সরকার সবাই মিলে শিল্প বাঁচাতে হবে। মালিক পক্ষকেও বলব বেতনের সমস্যা সমাধান করতে।
এ সময় শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, শ্রমিক প্রতিনিধিরা আছেন, তাদের কথা শুনতে চাই। আশুলিয়ার এক শ্রমিক নেতাকে মাইকের সামনে তিনি আহ্বান জানালে শ্রমিক নেতা বলেন, আলোচনাই হল সমাধানের মূল পথ। যত সমস্যা আছে আমরা এই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই সমাধান করব। কারখানা চালু থাকবে, আমরা সবাইকে সহযোগিতা করব।
এরপর উপদেষ্টা আদিলুর বলেন, কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে কথা হয়েছে। তিন ধরনের নিরাপত্তা টায়ার রাখা হয়েছে। সরকার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সহায়তা করবে। এরপরও কেউ যদি সমস্যা করে তাহলে তাদের মনে রাখা হবে।
এছাড়া শ্রম ও কর্মস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ভারতীয়রা গণমাধ্যম ও ইউটিউবে কনটেন্ট তৈরি করে বলা হচ্ছে ‘এখনই ভালো সময় ইনভেস্ট করার’। এখন আমাদের ভাবতে হবে আমরা কী করব। শিল্প কি আমাদের এখানে থাকবে, নাকি অন্য শক্তি নিয়ে নেবে?
বকেয়া বেতনকে মূল সমস্যা হিসেবে তুলে ধরে শ্রম ও কর্মস্থান উপদেষ্টা বলেন, এটাকে আগে অ্যাড্রেস করতে হবে। অনেক মালিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ও বেতন দেন না। সরকারের প্রণোদনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এ আচরণ বদলাতে হবে।… যে কোনো আন্দোলনে ষড়যন্ত্র সব সময়ই খোঁজা হয়। কিন্তু মূল সমস্যাও হচ্ছে সময় মত বেতন না দেয়া।
শ্রমিকদেরকে সরকারের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, আমাদেরকে সময় দিতেই হবে। আমরাও আন্দোলন করেছি, আপনাদের ন্যায্য দাবি যত দ্রুত সম্ভব সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই করব।
এর আগে হামিম গ্রুপের মালিক একে আজাদ বলেন, শ্রমিকদের কথা শোনার জন্য একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটি এক মাস সময় নিয়ে শ্রমিকদের কথা শুনবে। আমরা উপদেষ্টাদের কাছে শুনতে চাই এই এক মাস ফ্যাক্টরি চলবে কি চলবে না। তবে সরকার দায়িত্ব নিলে কারখানা চালাব, নইলে আগামীকাল (রোববার) থেকে সারা দেশে কারখানা অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করব।
প্রসঙ্গত, ছাত্র জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠী নানা দাবিতে মাঠে নেমেছে। পোশাক ও ওষুধ শিল্পের শ্রমিকরাও ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে নানা দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পোশাক শ্রমিকদের দাবিগুলো সুনির্দিষ্ট নয়। একেক কারখানায় একেক ধরনের দাবি উঠছে। সরকারের পক্ষ থেকে শুরুতে উসকানি ও ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়, যৌথ অভিযানও শুরু হয়। কিন্তু কোনো কিছুতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। গত মঙ্গলবার গাজীপুরে বিগ বস নামে একটি বড় কারখানায় আগুন দেয়া হয়। এছাড়া শনিবারও বেশ আশুলিয়ায় ৩৬টি কারখানা বন্ধ থাকে, ১৩টিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ