আদর্শিক ভিন্নতা থাকলেও সবাই একসঙ্গে জাতি গঠনে কাজ করবে
আওয়ামী লীগের আমলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান ছিল না। শেষ দিকে একচেটিয়া দখল ছিল ছাত্রলীগের। বিগত সরকারের ফ্যাসিস্ট আচরণে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে সরব ছিল শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ও দীর্ঘদিন পর ছাত্রশিবিরের আত্মপ্রকাশে এসব আলোচনা আরও শাণিত হচ্ছে। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাগো নিউজে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক আবদুল্লাহ আল মিরাজ। জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেই প্রতিষ্ঠানে এখনো প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারেননি, বিষয়টি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন? মঞ্জুরুল ইসলাম: ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামী ছাত্রশিবির যাত্রা শুরু করে। এই মুহূর্তে এসে আমরা সেখানে রাজনীতি করতে পারছি না। প্রতিষ্ঠানটি সব বড় সংগঠন বা যারা গঠনমূলক ছাত্ররাজনীতি করে তাদের কেন্দ্র বলা যায়। এখান থেকেই বাংলাদেশের বড় বড় নেতা গড়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের ফ্যাসিস্ট সরকার
আওয়ামী লীগের আমলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান ছিল না। শেষ দিকে একচেটিয়া দখল ছিল ছাত্রলীগের। বিগত সরকারের ফ্যাসিস্ট আচরণে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে সরব ছিল শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ও দীর্ঘদিন পর ছাত্রশিবিরের আত্মপ্রকাশে এসব আলোচনা আরও শাণিত হচ্ছে।
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাগো নিউজে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক আবদুল্লাহ আল মিরাজ।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেই প্রতিষ্ঠানে এখনো প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারেননি, বিষয়টি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
মঞ্জুরুল ইসলাম: ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামী ছাত্রশিবির যাত্রা শুরু করে। এই মুহূর্তে এসে আমরা সেখানে রাজনীতি করতে পারছি না। প্রতিষ্ঠানটি সব বড় সংগঠন বা যারা গঠনমূলক ছাত্ররাজনীতি করে তাদের কেন্দ্র বলা যায়। এখান থেকেই বাংলাদেশের বড় বড় নেতা গড়ে উঠেছে।
২০২৪ সালের ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরে আমরা অন্তত এটা আশা করি যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ছাত্র-জনতার যে দাবির প্রতিফলন আমরা দেখছি সেখানে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পুরো দেশেই সব দল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবে। আমরা মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির বৈষম্যের শিকার হবে না। বরং ছাত্রদের পক্ষে শুদ্ধ রাজনীতি চর্চার সুযোগ পাবে।
জাগো নিউজ: এই মুহূর্তে এসে ছাত্রশিবিরের ঢাবি কমিটির আত্মপ্রকাশ করার কি কোনো পরিকল্পনা ছিল?
মঞ্জুরুল ইসলাম: ছাত্রশিবির একটি গতিশীল সংগঠন। বছরের শুরুতে নিয়মিতই কমিটি গঠন হয়। সেই হিসেবে ঢাবি ছাত্রশিবিরের কমিটি বছরের শুরু থেকেই ছিল। এই সময়ে এসে ঢাবি সভাপতি বা সেক্রেটারি আত্মপ্রকাশ করেছে বিষয়টি এমন নয়। তবে সে সময় তারা মিডিয়ায় নিজেদের প্রকাশ করেননি। বিগত দুঃশাসনের সময়ে ছাত্রশিবিরের কিছু পলিসির কারণে আমরা চাইনি আমাদের দায়িত্বশীলরা সবার কাছে পরিচিত হোক।
এই আন্দোলন দলমত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল। এখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ অংশ নিয়েছে। যেহেতু ছাত্রশিবির ছাত্রদের সংগঠন, আর আন্দোলনের যাত্রা শুরু যেহেতু ছাত্রদের দিয়ে তাই ছাত্রশিবিরের অংশগ্রহণ ছিল।
জাগো নিউজ: ছাত্রশিবির এখন সব জায়গায় খোলসমুক্ত হয়ে রাজনীতি করবে কি না?
মঞ্জুরুল ইসলাম: সারাদেশের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের কার্যক্রম আছে সেখানে কমিটিগুলো উন্মুক্তই আছে। সব ক্যাম্পাসেই তারা ওপেনলি কাজ করে। আমরা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সব সময়ই মাঠে ছিলাম। ওপেন ছিলাম। এখানে একটি বিষয় হতে পারে, বিগত সময় মিডিয়া সেভাবে আমাদের প্রচার না করার কারণে বা ফ্যাসিবাদ সরকারের মিডিয়ার প্রতি যে অত্যাচার বা চাপ ছিল সে কারণে আমাদের প্রচার করেনি। এখন সে বাধা না থাকায় সবাই মনে করছে আমরা এখন সম্মুখে আসছি। তবে আমরা সব সময় উন্মুক্তভাবেই কাজ করেছি।
আরও পড়ুন
- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এনগেজমেন্টে বাংলাদেশকে আরও অগ্রসর হওয়া উচিত
- ১৫-২০ বছর ধরে আমাদের ‘বনসাই’ করে রাখা হয়েছে
- আমলাতন্ত্রের হাতে জিম্মি দুদক, প্রয়োজন আইনি সংস্কার
জাগো নিউজ: জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী সরকার বলতো আপনারাই আন্দোলন করছেন। ঢাবি সভাপতির সামনে আসা কি সেটা ইঙ্গিত দেয়, আপনারাই কি মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন?
মঞ্জুরুল ইসলাম: এই আন্দোলন দলমত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল। এখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ অংশ নিয়েছে। যেহেতু ছাত্রশিবির ছাত্রদের সংগঠন, আর আন্দোলনের যাত্রা শুরু যেহেতু ছাত্রদের দিয়ে তাই ছাত্রশিবিরের অংশগ্রহণ ছিল। তবে এ আন্দোলন ছাত্রদের সঙ্গে সব মানুষ অংশ নিয়েছিল।
জাগো নিউজ: বিগত সময়ে ছাত্রদলের সঙ্গে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে যাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগে থাকতো। এখন ছাত্রলীগের অনুপস্থিতিতে তারা আপনাদের প্রতিপক্ষ হবে কি না?
মঞ্জুরুল ইসলাম: আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার শুরু এবং এর আগের সময়ের দৃশ্যগুলোর মধ্যে ভিন্নতা আছে। এক সময়ে রাজনৈতিক চর্চার কারণে ক্যাম্পাসগুলোতে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এসে যে গণতান্ত্রিক চর্চা ছিল তা ফ্যাসিবাদের চর্চায় পরিণত হয়। তবে এখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বা একটি বিপ্লবের পরে নতুন কিছুর স্বপ্ন দেখছি। আমরা মনে করি ছাত্রদল কিংবা কোনো সংগঠন আশা করছি শুধু নিজেদের জন্য কাজ করবে না, একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে। আদর্শিক জায়গায় ভিন্নতা থাকলেও সবাই একসঙ্গে জাতি গঠনে কাজ করবে।
আমরা মনে করি ছাত্রদল কিংবা কোনো সংগঠন আশা করছি শুধু নিজেদের জন্য কাজ করবে না, একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে। আদর্শিক জায়গায় ভিন্নতা থাকলেও সবাই একসঙ্গে জাতি গঠনে কাজ করবে।
জাগো নিউজ: ছাত্রশিবির এখনো ঢাবি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ সংগঠন। বাম দলগুলো কিংবা ছাত্রদল বলেছে এখানে রাজনীতি করতে হলে আগের বিষয়গুলো ক্লিয়ার করেই আসতে হবে। আপনারা এ বিষয়গুলো কীভাবে দেখছেন?
মঞ্জুরুল ইসলাম: ঢাবি ছাত্রদল বা যারা এসব কথা বলছেন, আমি মনে করি এখনো তারা বৈষম্যের কথা বলছেন। এর আগে পরিবেশ পরিষদ বা এ ধরনের সংগঠনের নামে ছাত্রশিবিরকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধকরণ আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ীই সব দলের রাজনৈতিক চর্চার অধিকার আছে। এই সময়ে এসে এ ধরনের বৈষম্য করবে তা হওয়া উচিত নয়। তাই আমরা মনে করি যারাই বলেছেন তারা অযৌক্তিক বলেছেন। এখনো যারা বলছেন তারা এ জাতির সঙ্গে আবারও বৈষম্য করার ষড়যন্ত্র করছেন।
জাগো নিউজ: বিগত সময়ে আপনাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম সেভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। সামনের দিনে কীভাবে কাজ করবেন?
মঞ্জুরুল ইসলাম: বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম সব সময় অব্যাহত ছিল। আমরা মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা সেভাবে কাজ করতে পারেনি। তবে এখন হয়তো সেই স্পেসটা পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সংগঠন কার্যক্রম সব সময় চালু রেখেছে, যে কোনো পরিস্থিতিতে চলমান থাকবে।
জাগো নিউজ: তৌহিদি জনতার নাম দিয়ে মাজারে হামলা হয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে ছাত্রশিবির জড়িত কি না?
মঞ্জুরুল ইসলাম: ছাত্রশিবির বা যারা আমাদের ভালোবাসে তারা এভাবে মাজার বা কোনো প্রতিষ্ঠানে হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। হয়তো কিছু মহল আমাদের মাজার ভাঙার মিথ্যা অপবাদ দেয়। তবে এ ধরনের কোনো সত্যতা তারা কখনো প্রমাণ করতে পারেনি। মাজার ইস্যুতেও কেউ এ ধরনের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারবে না।
জাগো নিউজ: ইসলামি দলগুলো থেকে বলা হয় গণতন্ত্র কুফর। এ ধরনের বিষয়ে ছাত্রশিবির ইসলামি দলগুলোর থেকে রাজনীতির মাঠে বাধাপ্রাপ্ত হয় কি না?
মঞ্জুরুল ইসলাম: ছাত্রশিবির ইসলামকে ধারণ করেই চলে। বিভিন্ন দল আমাদের নিয়ে অপপ্রচার চালায়। তবে যারা ইসলামকে নিজের জীবনে প্রয়োগ করে তাদের আমরা নিজেদের ভাই মনে করি। কেউ যদি আমাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে আমরা তা গ্রহণ করি। তবে আমাদের বিষয়ে যদি কোনো অপপ্রচার হয় সে বিষয়ে আমরা সচেতন থাকি।
জাগো নিউজ: ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে আপনাদের স্ট্যান্ড কী?
মঞ্জুরুল ইসলাম: বাংলাদেশ যে দুঃসময় পার করেছে সেখানে ছাত্রদের অধিকারের পক্ষে যে রাজনীতি, রাজনীতির মধ্যে যে কল্যাণ রয়েছে এমন কিছু তারা দেখেনি। ছাত্ররাজনীতি যদি নিষিদ্ধ হয় তাহলে এখান থেকে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার যে সুযোগ তা বন্ধ হয়ে যাবে। দক্ষ, যোগ্য নেতৃত্ব যেখান থেকে গঠিত হয় তা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে। তাই ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্ররাজনীতির যৌক্তিক সংস্কার চায়। এর মাধ্যমে জাতি উপকৃত হবে।
জাগো নিউজ: জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মঞ্জুরুল ইসলাম: জাগো নিউজকেও অনেক ধন্যবাদ।
এএএম/এএসএ/এমএস